আমি কখনই বিশ্বাস করি না যে, শুধুমাত্র একজন শিক্ষকের জন্য একজন ছাত্রের জীবন পরিবর্তিত হয়। অন্যভাবে বললে একজন ছাত্রের সফলতার পিছনে যে একজন শিক্ষকের হাত রয়েছে সেটা আমি পুরোপুরি মানি না।
শিক্ষক যদি মুখ্য বিষয় হতো তাহলে ১০০ জন শিক্ষার্থীর ১০০ জনই সফল হতো। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। বাস্তবে ১০০ জনের মধ্যে সফল হয় দুই একজন। যাদের নিজেদের চেষ্টা থাকে, ভালো কিছু করার আকাঙ্ক্ষা থাকে, সফল হওয়ার জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করে তারাই সফল হয়। আর শিক্ষক তার সফলতার অংশীদারিত্ব পেয়ে যায়। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যারা সফল তারা শুধুমাত্র তাদের চেষ্টায় সফল।
দেখেন আমি কোনো শিক্ষককে অসম্মান করছি না, আমি শিক্ষকের উপস্থিতিকে অস্বীকারও করছি না। কিন্তু তারা সরাসরি বিক্রিয়া করে না, তারা বিক্রিয়ার প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। কোনো স্পেসিফিক শিক্ষক না থাকলেও যারা সফল তারা সফলতার মুখ দেখতো, শুধু প্রসেসটা একটু ধীরে হতো। তাই আমি কোনো দিন আমার কোনো শিক্ষার্থীর সফলতার ক্রেডিট নেই নি এবং ভবিষ্যতেও নেবো না।
অনেকেই মাঝে মাঝে নক দিয়ে বলেন ভাইয়া আপনার কোর্স করে চাকুরি পেয়েছি। আমি ভালো কিছু করেছি। এখানে আমার স্ট্রেইট উত্তর, এই অর্জনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আপনার। আমি হয়তো আপনাকে একটা টেকনলজি শিখিয়েছি কিন্তু সফটস্কিল ঐভাবে হয়তো তো শেখাতে পরিনি, ভদ্রতা তো শেখাতে পারিনি, ইংরেজি বলা শেখাতে পারিনি কিংবা ইন্টারভিউ বোর্ডে নার্ভ কন্ট্রোল করা শেখায় নি, হয়তো যোগ্যভাবে কমনসেন্স শেখাতে পারিনি। তাহলে আমার জন্য কিভাবে আপনি চাকুরি পেলেন? ক্রেডিট দিতে হলে লাইফ লং যত শিক্ষক আপনার জীবনে এসেছে সবাইকে ক্রেডিট দিতে হবে। আপনার পরিবার, আপনার বন্ধুবান্ধব, আপনার সমাজ সবাইকে ক্রেডিট দিতে হবে। কারণ সব জায়গা থেকে অল্প অল্প জ্ঞান অর্জন করে আপনি আজকের জায়গায় এসেছেন। আমি বা আমার বানানো ভিডিও, আমার করানো কোর্স এখানে একটা প্রভাবক মাত্র।
তবে এই প্রভাবক হতে পারার সুখটা অনবদ্য। বিগত ছয় বছর ধরে হাজার হাজার বার এই সুখ আমাকে ধরা দিয়েছে। জানিনা কত জনের জীবনে সত্যিকার অর্থেই প্রভাবক হতে পেরেছি। সেইসাথে একজন শিক্ষক পথের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভিখারি-একজন অন্ধকে তাঁর সঠিক রাস্তা তা বাতলে দেয়। তিনি একজন বাবুর্চি- রান্নায় মসলার পরিমাণ কতটুকু দিবে তা বলে দেয়। তিনি ছাত্রের মেন্টালিটি- সাইকোলজি বুঝে কখন কোথায় কি দেয়া লাগবে, তা দেয়। তিনি একজন ছাত্রের লিমিটেশন বুঝে এক চামিচ করে, বাচ্চার মুখে খাবার দিতে জানে। তিনি বাচ্চার ত্যারা অভিমানে চুপ করে বুঝে শুনে একই পথে হাটতে বাধ্য রাখে। তিনি কখনো বন্ধু- কখনো ভাই- কখনো গার্ডিয়ান- কখনো পুলিশ- কখনো মনের ডাক্তার- কখনো লিডার- কখনো বস- অবশেষে স্বীকৃত হয় শিক্ষক হিসেবে।। এখানে শিক্ষার্থীর পাশে পুরোপুরি ক্রেডিট শব্দটা মানান সই নয়।। সম্পূর্ণরূপে ছাত্রের ক্রেডিট নেওয়ার পক্ষেও আমি নই। এটা একান্তই আমার মতামত এতে অনেকের ভিন্ন মত থাকতে পারে।
মোঃ মোস্তফা রাহমান
তথ্য ও প্রযুক্তি শিক্ষক,
মাদবারহাট ইসলামিয়া ফাযিল (স্নাতক) মাদ্রাসা
ওয়েব এন্ড সফটওয়্যার ডেভেলপার, C360SOFT.AI, INDIA